Search within this blog

Thursday, January 18, 2007

এ এক অদ্ভুত গল্প


- জয়দীপ দত্ত


- এই ছুটিতে কোথায় যাওয়া যায়?
-
ছুটিতে? ইন্টার কিলিক করো...

সত্যি, অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নাচান-খাওয়া-অফিস-ঘুম-চান-খাওয়া... থোড়-বড়ি-খাড়া-খাড়া-বড়ি-থোড়আজকাল বড্ড একঘেয়ে লাগেকোথাও ঘুরে আসলে মন্দ হত না

অবিশ্যি যেতে তো কোন বাধা নেইমানুষ বলতে তো আমি একাআত্মীয় বলতেও তেমন কেউ নেইসুরেশটা ছিল, সেও নিখোঁজ হয়ে গেছে আজ দু'বছর হলএখন আমি একা... বিলকুল একাযেকোন দিন মোহনবাবুকে বলে বেরিয়ে পরলেই হয়

সুরেশটা চলে যাওয়ার পর জীবনটা বড্ড ফাঁকা হয়ে গেছেআমার সত্যিকারের বন্ধু ছিল ওও আর আমি একসাথেই চাকরি পেয়ে কলকাতায় আসিউঠি মোহনবাবুর বাড়ী পেইংগেস্ট হয়েসেই থেকে একসাথেই ছিলামকিন্তু বছর দুই আগে... কী যে হল! সুরেশটা হঠাৎই... কাউকে কিছু না বলে... কোথায় যে গেল!

ছুটিতে ঠিক করলাম চন্দনগুড়িই যাবপাহাড়ের কোলে ছোট্ট শহর, নিরিবিলিতে ভ্রমণের পক্ষে দুর্দান্ত অবিশ্যি এটাই একমাত্র কারণ নয়... বছর দুয়েক আগে এখানে এসেই সুরেশ নিখোঁজ হয়

দুবছর আগে এরকমই একটা পুজোর ছুটিতে সুরেশ গিয়েছিল চন্দনগুড়ি বেড়াতেওর কী এক দুরসম্পর্কের মামা ঐখানে থাকে, সেখানেই উঠেছিলআমিও সঙ্গে যেতাম, কিন্তু আমার আবার তখন পিসতুতো বোনের বিয়ে পড়ে গেছিলতাই সুরেশ একাই গেলএখন মনে হয় সুরেশের সঙ্গে গেলেই ভাল হতআমি থাকলে হয়ত ছেলেটা এইভাবে নিখোঁজ হত না!

অবিশ্যি পুলিশ অনেক খুঁজেছিলকাগজে, টিভিতে ঘোষণাও বেরিয়েছিলকিন্তু এইসব কেসে যেমন হয় আরকি! আমি বা সুরেশ কারোরই তেমন ধরাকরা ছিলনা যে একটু তদ্বির-তদারক করবেকেসটা নিয়ে প্রথম কটা দিন একটু হইচই হল... তারপর আর পাঁচটা ফাইলের তলায় চাপা পড়ে গেল

* * *

আজ পাঁচ তারিখপাঁচই অক্টোবর দুহাজারপাঁচকাল আমি বেরোচ্ছিসকাল সাড়ে ছ'টায় শেয়ালদা থেকে ট্রেনতাই সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বেরোতে হবেশেয়ালদা থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে শেরগাঁওসেখান থেকে বাসে চন্দনগুড়ি

শেরগাঁও যখন পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে ন'টাএত রাতে আর বাস পাওয়া যাবে নাতাই রাতটা কোনওভাবে কাটিয়ে ভোরভোর বাস ধরতে হবেশেরগাঁও রেলওয়ে জংশনতাই হোটেল পেতে অসুবিধে হল নাপরদিন অর্থাৎ ৭ই অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটায় বাস ধরলাম

চন্দনগুড়িতে পৌঁছলাম প্রায় বেলা ১টা ১৫তেএমনিতে এত দেরি হওয়ার কথা নয়, কিন্তু মাঝপথে একটা জায়গায় কী কারণে বাসটা প্রায় ঘন্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে ছিল অবিশ্যি এতে লোকসান বিশেষ হয়নি কারণ যেখানে বাসটা দাঁড়িয়েছিল তার সিনিক বিউটি দেড়ঘন্টায় ফুরোবার নয়

আজকে পৌঁছেই একবার পুরো ব্যাপারটা ছকে ফেললামপ্রথমেই সুরেশের সেই মামার খোঁজ করতে হবেতিনি নাকি আবার ওই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বড়োলোকবিরাটবড় টি-এস্টেট আছে তাঁরনাম শশাঙ্ক শেখর দেব

বিকেলে একটু চারদিকটা ঘুরে দেখে নিয়ে রাত্তিরটা রেস্ট নিলামকালকে যাব সুরেশের ওই মামার সঙ্গে দেখা করতে

* * *

পরদিন সকাল ন'টায় বেরোন গেলহোটেল থেকে বেরিয়ে একটু এগোলেই পুরানাবাজারপুরানাবাজারে অনেক দোকান আছে যেখানে জিপগাড়ী ভাড়া পাওয়া যায়সেরকমই একটা জিপ ভাড়া করলাম সুরেশের মামার সঙ্গে দেখা করার জন্যবাড়ী চিনতে অবিশ্যি অসুবিধার কারণ নেই কারণ তাঁকে এখানে একডাকে সবাই চেনে

বাড়ীতো নয়! দূর্গ একটানামটাও সেই রকম, 'মহারাজ কাস্‌ল'চারদিকে প্রায় আটফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বিশাল এরিয়া জুড়ে বাড়ীবিশাল বড় গেট, যাকে বলে 'সিংহদুয়ার'গেটের পাশে দারোয়ানগিয়ে বললাম, ঢুকতে দিল নাশেষটায় চিরকুট পাঠাতে হলডাক এল মিনিট পাঁচেক পর

পাঁচিলের ভেতর ঢুকতেই বিশাল বড় লনতাতে সবুজ ঘাসের গালিচা আর নানা রকম ফুলের গাছদেখলেই বোঝা যায়, প্রচূর পরিশ্রম আর প্রচুর টাকা দুইই ব্যয় হয় এই বাগানের দেখাশুনার কাজেলনের মধ্যে দিয়ে একটা চওড়া সিমেন্টে বাঁধানো রাস্তা আছে প্রায় একশো মিটার লম্বাতারপর একটা বিরাট প্রাসাদোপম তিনতলা বাড়ীবাড়ীর পাশ দিয়ে আরেকটা সরু রাস্তা চলে গেছে বোধহয় বাড়ীর পিছনদিকে যাওয়ার জন্য

সুরেশের মামা বাইরের ঘরেই অপেক্ষা করছিলেনআমাকে দেখে বললেন,
-
এসো এসো, তা সুরেশ তো তোমার বন্ধু ছিল?
-
আজ্ঞে হ্যাঁসেই হাইস্কুল থেকেই তারপর চাকরিও পাই একই কোম্পানিতে... সুরেশ আমার খুব বন্ধু ছিল
-
বুঝি বুঝি, তোমার কষ্টটা আমি বুঝিতারপর, এখানে কি ঘুরতে এসেছো? ... আঃহা, তুমি দাঁড়িয়ে কেন! বসো বসো
-
না না ঠিক আছে আমি বসলাম
-
তারপর? ঘুরতে এসেছো?
-
আজ্ঞে হ্যাঁঅনেকদিন ধরেই কোথাও যাওয়া হয়নাসুরেশটা মিসিং হওয়ার পরথেকে লাইফটা বড্ড একঘেয়ে হয়ে গেছেতাছাড়া সুরেশের মুখেও জায়গাটার অনেক সুখ্যাতি শুনেছি
-
তা অবিশ্যি তুমি ঠিকই করেছ বুঝলেএমন জায়গা, এমন সুন্দর অথচ শান্ত, নিরিবিলি তুমি আর কোথাও পাবেনা। - তা তুমি উঠেছো কোথায়?
-
হোটেল স্নো ভিউ
-
সে কি? এই শহরে আমি থাকতে তুমি হোটেলে থাকবে কেন? হাজার হোক সুরেশের বন্ধু তুমি! না না না, কাল সকালেই চেক আউট করে আমার এখানে চলে আসবেআমি গাড়ী পাঠিয়ে দেবনা না না, কোনো আপত্তি আমি শুনবনাও হো হো... দেখেছো! একদম ভুলেই গেছি! তোমার নামটাই তো জানা হয় নি
-
আমার নাম রূদ্ররূদ্রনীল রায়
-
বেশ বেশ, আমায় তুমি মামাবাবু বলেই ডেকো সামান্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন, আচ্ছা, তুমি তাহলে এখন এসোআমার কয়েকটা জরুরী কাজ আছেকাল আবার কথা হবে
-
না মানে, ইয়ে, আমি বলছিলাম, কী দরকার ঝামেলায় গিয়েহোটেলেই তো ঠিক আছে
-
না নানা বললেই আমি শুনব কেন? কালকে আমি গাড়ী পাঠিয়ে দেবচলে এসো, কেমন!
-
আচ্ছা

মামাবাবু লোকটাকে বেশ ভালো বলেই মনে হলহট্‌ করে তিনি যে আমাকে থাকতে বলে বসবেন তা আমি ভাবতেও পারিনিতবে এ বেশ ভালই হয়েছেহোটেলের বিলও গুণতে হবে না, আর তাছাড়া মামাবাবুর বাড়ীর লোকেশানটা এত সুন্দর যে শুধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়

পরদিন ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতে গিয়ে এক কেলেঙ্কারীজল যে এতটা ঠান্ডা হবে তা আমি ভাবতেও পারিনিহট্‌ করে মুখে ঢালতেই দাঁত পুরো কন্‌কন্‌ করে উঠেছেকোনোরকমে মুখটুখ ধুয়ে হোটেলের ঘরে বসে চা আর একটা স্ন্যাক্স খাচ্ছি, এমন সময় বেয়ারা এসে খবর দিল যে মামাবাবুর গাড়ী এসে গেছে

* * *

গাড়ী আমায় নিয়ে চলল মামাবাবুর বাড়ীতে
আরে এসো এসো! সকালের লুচিতো ঠান্ডা হয়ে গেল

লুচি আর আলুরদম খেতে খেতেও আবার উঠল সুরেশের প্রসঙ্গ সত্যি, খেতে বড্ড ভালবাসত সুরেশমামাবাবুই বললেন, এইদেখ তুমি এলে, সুরেশ থাকলে কত ভাল হত বলতো
আমি বিষন্ন মুখে একটু শুধু হাসলাম
মামাবাবু বলে চললেন, তা সুরেশ আর তুমি তো একইসাথে থাকতে?
-
হ্যাঁ
-
যাক, ছাড়ো ওসব কথা, যে মারাই গেছে তাকে নিয়ে আর ভেবে কি লাভ?

বেশ অমায়িক লোক এই মামাবাবুহলেই বা আমি তার ভাগ্নের বন্ধু, এইভাবে বাড়ীতে ডেকে এত আপ্যায়ন কজনইবা করেকিন্তু, মামাবাবুর এই কথাটাতে আমার মনটা কেমন যেন খচ্‌ করে উঠলআজ দুবছর হল সুরেশ নিখোঁজ ওর মা-বাবাও হয়তো আশা ছেড়েই দিয়েছেনকিন্তু সুরেশ মারা গেছে এই কথাটা মামাবাবু এত জোর দিয়ে বলছেন কীকরে?

- কী হল? কী ভাবছ এত? নাও হাত ধুয়ে নাওঅ্যাই হরে, প্লেট দুটো নিয়ে যা
এসো, তোমাকে এই বাড়ীটা ঘুরিয়ে দেখাই

আমি সম্বিৎ ফিরে পেলামবললাম, চলুন

সত্যি, বিশাল বড় বাড়ী মামাবাবুরসামনের দিকে আছে বিশাল ফুলের বাগান যার অর্ধেক ফুলের আমি নামই জানি নাএইদিকটা অবশ্য কালকেই দেখেছি

বাড়ীর পিছন দিকে আছে বেশকিছুটা খোলা জায়গা যার বেশকিছুটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো তাতে বর্গাকার খোপ খোপ কাটাদেখে মনে হয় ইঁট দিয়ে নয় বরং ঢালাই করা স্ল্যাব পেতে পেতে চত্বরটা বানানোতবে যেটা অদ্ভুত লাগল সেটা হল, বাঁধানো জায়গাটা ঠিক চৌকো নয় কেমন যেন এলোমেলো আকারেরআর সবটা একই সাথে বানানো হয়নিচত্বরটার পেছনের দিকের অংশ সামনের দিকের তুলনায় বেশ নতুন কারণ তাতে শ্যাওলার ছোপ নেই

* * *

দুপুরের খাওয়ায়ও এলাহি ব্যাপারভাত, লালশাকভাজা (চিনেবাদাম দিয়ে), মুড়িঘন্ট, পাঁঠার মাংস আর পায়েসআমি বললাম, একি মামাবাবু, একী করেছেন! আমি এত খেতে পারব?
-
আরে, খেয়ে নাও! খেয়ে নাও! শোনো, তোমায় একটা কথা বলি, খাবার পেলে কোনদিন ছাড়বে নাকখন কি হয় কিছু কি বলা যায়? হাঃ হাঃ হাঃ!
মামাবাবুর গলাটা কিছুটা অদ্ভুত শোনালো

খাওয়াদাওয়ার পর দুপুরে জব্বর ঘুমিয়ে পড়লামআজকে তো তেমন কোথাও ঘোরা হলনা, রাত্রের দিকে বাজারের ওদিকটা ঘুরে আসা যাবেবাদবাকী কাল সকাল থেকে

ঘুম ভাঙলো চাকর হরে-র ডাকেদেখলাম, পাঁচটা বেজে গেছে
-
বাবু, চা
-
ও আচ্ছা, রেখে যাও
-
বাবু, বাবু বসার ঘরে বসি আছেনআমাকে বললেন আপনারে ডাকবার জন্যি
-
আচ্ছা, তুমি যাও, আমি মুখটুখ ধুয়ে আর এই চা টা খেয়ে আসছি
-
আজ্ঞে

* * *

তাড়াতাড়ি চা খেয়ে আমি বসার ঘরে এলাম

- এসো, এসো, তোমার জন্যই বসে আছি
-
না আসলে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি একটু লজ্জিত হয়েই বললাম
-
আরে না না! তাতে কি হয়েছে! আরে, বেড়াতে এসে ঘুমোবে নাতো কি অফিসে গিয়ে ঘুমোবে? হাঃ হাঃ হাঃযাক সে কথাএসো তোমাকে এবার বাড়ীর ভেতরটা ঘুরিয়ে দেখাই

সত্যিই বেশ বড় বাড়ী এই মামাবাবুরঠিক প্রাসাদের মত বড় বড় ঘরবাড়ীর ঠিক মাঝখানে বিশাল বড় একটা হলঘরহলঘরের দেওয়ালে বড় বড় ফ্রেমে ছবি টাঙানোবেশীরভাগই অয়েল পেন্টিংচারটে ছবি ক্যামেরায় তোলাবোধহয় মামাবাবুর পূর্বপুরুষদের

হলঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মামাবাবু বললেন, দাঁড়াও, তোমাকে একটা জিনিস দেখাই
বলে তিনি সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে একটা সুইচ টিপলেনঅমনি মেঝের একটা অংশ সরে গিয়ে একটা গর্ত বেরিয়ে পড়লএকটা সিঁড়ি সেই গর্তের মধ্যে দিয়ে নেমে গেছে
-
এসো আমার সঙ্গে
আমি মামাবাবুর পেছন পেছন আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলামসিঁড়িটা একটানা অনেকটা নেমে গেছে এমন নয়চার-পাঁচ ধাপ পরপরই একটা করে চাতাল আর তার পর সিঁড়িটা একটু বেঁকে গেছেহাল্কা আলো জ্বলছেএইভাবে কিছুটা নামার পর আর একটা হলঘরে পড়লাম

ঘরটার মধ্যে দুটো টিউবলাইট জ্বলছেআর কি একটা যেন চাপা যান্ত্রিক আওয়াজএকপাশে সারি সারি আলমারির মত সাজানোঠিকমত দেখতে বোঝা গেল ওগুলো আসলে একেকটা ফ্রিজারশব্দটা ওইগুলো থেকেই আসছেঘরের অন্যদিকে দুটো কাঠের আলমারীআর ঘরের মাঝখানে একটা লম্বা কাঠের টেবিল তাতে সাদা রঙের টেবিলক্লথ পাতাছাদ থেকে একটা আলো এসে ঠিক ওই টেবিলটার একটু ওপরে ঝুলছেটেবিলের পাশে কী একটা বড়মত জিনিসকভার পরানো থাকায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না

আমি আশ্চর্য় হয়ে তাকিয়ে আছিহঠাৎ মামাবাবু মুখ খুললেন
এইবার তোমাকে আমার শখের কথা বলবতার আগে এসো তোমায় একটা জিনিস দেখাই বলে তিনি এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজার গুলোর দরজা একটা একটা করে খুলতে লাগলেনভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলআর নড়াচড়ার শক্তি আমার নেইফ্রিজার গুলোর মধ্যে থরে থরে সাজানো নাহক অন্ততঃ পঞ্চাশটা মানুষের কাটা মুন্ডু

মামাবাবু বলে চললেন, আসলে এই আমার বিচিত্র শখজ্যান্ত মানুষের মুন্ডু জমানোএই যেমন দেখ, একে তুমি চিনতে পারবেএ হল সুরেশ ব্যানার্জীতোমার বন্ধুআমার লেটেস্ট কালেকশান বলে সুরেশের মুন্ডুটাকে বারকরে এনে আমাকে দেখিয়ে আবার স্বস্থানে রেখে দিলেনভয়ে তখন আমার মুখ দিয়ে গোঙানি বের হচ্ছেআমার সাড়া দেহ ভয়ে অসাড়কোনোমতে দাঁড়িয়ে রয়েছি অজ্ঞান যে হইনি কেন সেইটাই আশ্চর্য় ।

মামাবাবু বলে চলেছেন,
- আমি কিন্তু কাউকে মারতে চাইনা জানো, শুধু মুন্ডুটা কেটে রেখে দিইকিন্তু কি করব বলো, মুন্ডুটা কাটতেই বাকী দেহটাও সাথে সাথে ধড়ফড়িয়ে মরে যায় তাই তো ওপরে শানের নিচে স্কন্ধকাটা লাশগুলোকে পুঁততে হয়লম্বা লম্বা গর্ত করে লাশগুলো পুঁতে ওপরে বেশ কিছুটা নুন দিয়ে স্ল্যাব চাপা দিয়ে দিইনুন দেওয়াতে সহজে পচে না কী ঝামেলা বলোতো! এসো এসো, তুমি আর মেলা দেরী কোরো নাএই টেবিলে শুয়ে পড়োসামান্য সময়ের ব্যাপারতুমি বুঝতেও পারবে না বলে তিনি টেবিলটার পেছনের জিনিসটার ঢাকা সরিয়ে নিলেনসেটা একটা ইলেক্ট্রিক করাত

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছিইলেক্ট্রিক করাতএর সুইচ অন করে এবার মামাবাবু আরো ঠান্ডা গলায় বললেন, কী হল? ফালতু দেরী করছ কেন? এখন কত কাজ বাকী দেখনি? রক্ত পরিস্কার করতে হবেতোমার বডিটাকে ওপরে নিয়ে যেতে হবেহরেটা অবশ্য তোমার থেকে বেশী চটপটেএতক্ষণে তোমার জন্য গর্ত খোঁড়া হয়ে গেছেতবু, বাদবাকী কাজগুলো সারতে সময় লাগবে তো তাড়াতাড়ি করো! রাতের খাবার 'টার পর খেলে আমার আবার অম্বল মত হয়

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি মামাবাবু এবার একটু নরম সুরে বললেন, ভয় করছে? আরে ভয়ের কী? শুধু গলাটা কাটব মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যাবেএকটুও লাগবে নাআর তাছাড়া বেঁচে থেকেই বা কী হবে! মরতে তো আমাদের সবাইকেই হবে একদিন না একদিন একটু থেমে মামাবাবু শান্তভাবে বললেন, আর হ্যাঁ, পালাবার চেষ্টা করে লাভ নেইকারণ ওপরে ওঠার দরজা বন্ধআমি ছাড়া ওটা কেউ খুলতে পারবে না বলে তিনি আমার হাত ধরে আলতো করে টান দিলেন

পালাবার শক্তি আর আমার নেইআমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেবিলটাতে গিয়ে শুয়ে পড়লামওপর থেকে ইলেক্ট্রিক করাত নেমে এলপ্রথমে গলার কাছটা ঠান্ডামতো লাগলতারপর মুহূর্তের জন্য ভীষণ জ্বালাতারপর আমি আর কিছু জানি না

আমার মুন্ডুটা এখন মামাবাবুর ভূগর্ভ কুঠুরির তিন নম্বর ফ্রিজারের দুই নম্বর তাকের একপাশে সাজানো রয়েছে পরবর্তী সঙ্গীর অপেক্ষায়


Plot conceived: 26/05/2003.
First part written: 24/05/2004.
Last part written: 03/01/2007.

Author: Joydip Datta (http://www.geocities.com/joydipdattaonline )

No comments: