হ্যারী পটার এবং জিয়নকাঠি
কিছু নির্বাচিত অংশ এখানে অনুবাদের চেষ্টা করা হল।।
ঊনবিংশ অধ্যায়
স্বর্ণমৃগ
সেদিন হারমাইনির যখন পাহারা দেওয়ার পালা পড়ল তখন প্রায় মাঝরাত। বাইরে বরফ পড়ছে। হ্যারীর দুচোখে আবার দুঃস্বপ্নের ছায়া। নাগিনী যেন চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হ্যারী ধড়মড়িয়ে জেগে উঠল। কে যেন তাকে দূর থেকে ডাকছে। তাঁবুর বাইরের শনশন বাতাসের শব্দ যেন কাদের পায়ের আওয়াজ, গলার শব্দ।
শেষপর্যন্ত্য সে উঠে গিয়ে হারমাইনির পাশে গিয়ে বসল। হারমাইনি তখন তাঁবুর দরজার কাচছে গুটিসুটি মেরে তার জাদুদন্ডের আলোয় জাদুবিদ্যার ইতিহাস পড়ছিল। চারপাশে মুষলধারে বরফ পড়ছিল। তাই হ্যারী যখন তাকে চটপট এই জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় তাঁবু ফেলার আইডিয়া দিল তখন সে হ্যাঁ বলল।
... ... ...
Harry had no strength to lift his head and see his savior's identity
কে তাকে বাঁচাল সেটা লক্ষ্য করার মত শক্তি তখন হ্যারীর ছিল না। সমস্ত শক্তি জড় করে সে তার গলার কাছে হাত বুলিয়ে দেখল লকেটটা আছে কি না। না নেই। তার মাংসের মধ্যে কেটে যে লকেটটা বসে গেছিল, সেটাকে কেউ ছাড়িয়ে নিয়েছে। তারপরই হাঁপাতে হাঁপাতে কে যেন বলে উঠল,
"তুই কি খেপেছিস নাকি?"
শুধুমাত্র ওই কন্ঠস্বরের ধাক্কাটাই হ্যারীকে উঠে বসার শক্তি যোগাল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রন; সমস্ত কাপড় জবজবে ভিজে, এক হাতে গ্রীফিন্ডোরের তরবারী আর অন্যহাতে সেই প্রাণভোমরা।
"কি কান্ড করছিস বলতো এখানে?" প্রাণভোমরাটা হাতে শক্ত করে ধরে রন বলল। "মালটা না খুলেই জলে নেবেছিলি?"
হ্যারীর কাছে কোনো উত্তর ছিল না। রন আবার ফিরে এসেছে, তার তুলনায় স্বর্ণমৃগ কিচ্ছু না। তার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কাঁপতে কাঁপতে পুকুরের ধারে স্তুপ করে রাখা জামাকাপড় হ্যারী একটা একটা করে গায়ে ঢোকাতে লাগল। খালি মনে হতে লাগল এই বুঝি রন অদৃশ্য হয়ে যাবে। কিন্তু তা নয়, রন সত্যি ফিরে এসেছে। এইমাত্র সে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে তাকে বাঁচিয়েছে।
"ত-তুই?" অবশেষে হ্যারী বলল।
"ইয়ে মানে... হ্যাঁ।" একটু বিচলিত হয়ে রন বলল।
"হরিণটা তুই বানিয়েছিলি?"
"কী? ইয়ে, না। আমিতো ভাবলাম তুই করেছিস ওটা।"
"আমার পেট্রোনাস একটা ছাতার মত।"
... ...
"খুলিস না। আমি সিরিয়াসলি বলছি"
"কেন? না কেন? মাসের পর মাস ধরে বহুত ভুগিয়েছে। এবার মালটাকে ছাড়ব না"
"আমি পারবনা হ্যারী। সিরিয়াস। তুই কর।"
"কিন্তু কেন?"
"কারন আমি পারিনা এটার সঙ্গে" লকেটটা যে পাথরের ওপর রাখা ছিল সেটার থেকে থেকে দুপা পিছিয়ে গিয়ে রন বলল। "আমি পারিনা এটাকে হ্যান্ডেল করতে। আমি কোন অজুহাত দিচ্ছিনা। তুই দেখলি তো কি হয়েছিল... তোর বা হারমাইনির চেয়ে আমার ওপর এটা বেশী এফেক্ট করে। অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস ভাবতে থাকতাম আমি এটা পরলে। ম্-মানে এমনিতেই হয়তো সেগুলো ভাবতাম আমি... কিন্তু এটা সমস্তটাকে আরো... আরো বিচ্ছিরি করে দিত। আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না... কিন্তূ এটা খুলে ফেললেই আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যেত। আমি... আমি পারবনা হ্যারী।"
রন পিছিয়ে গেছে। তরবারীটা তার হাত থেকে ঝুলছে। তার মাথার ঝাঁকুনি যেন থামছেই না।
"তুই পারবি" হ্যারী বলল, "পারবি তুই। তরবারীটা তুই পেয়েছিস; তাই সেটাকে ব্যবহারও তোকেই করতে হবে। প্লিজ রন, এসব ছেড়ে বেরিয়ে আয়।"
তার নামের উচ্চারন যেন রনকে একটু হলেও উদ্বুদ্ধ করল। রন ঢোঁক গিলে, তার লম্বা নাক দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে পাথরটার দিকে এগিয়ে এল।
"বলবি কখন।" রন চেঁচিয়ে বলল।
"তিন গোণার পর।" হ্যারী বলল। খুব মনযোগ দিয়ে এবার হ্যারী লকেটটার দিকে তাকাল। লকেটটার যেখানে এস্ লেখা আছে সেটা যেন একটা সাপ। ফাঁদে পড়া আরশোলার মত লকেটটা তখন লাফাচ্ছে। খুব সহজেই এটাকে দয়া দেখান যেত, যদিনা হ্যারীর গলায় কাটা দাগটা তখন টনটন করত।
"এক... দুই... তিন... খুলে যাও "
শেষ শব্দদুটো হ্যারীর গলা দিয়ে হিস্হিসানির মত বেরিয়ে এল। আর কুট্ করে শব্দ করে লকেটটা খুলে গেল।
লকেটের ভেতরে পলক ফেলল জ্বলজ্বলে একটা চোখ। সাপের চোখের মত হয়ে যাওয়ার আগে টম রিড্লের চোখ যেমন ছিল ঠিক তেমনি।
"মার্।" হ্যারী লকেটটাকে পাথরর ওপর শক্ত করে ধরে বলল।
কাঁপা কাঁপা হাতে রন তরবারীটা তুলল। তরবারীর ডগাটা সেই কুতকুতে চোখের ওপর দুলতে লাগল। হ্যারী লকেটটাকে শক্ত করে ধরল। সে এখনই কল্পনা করতে পাচ্ছে যে লকেটটার থেকে রক্ত গড়িয়ে আসছে।
ঠিক তখনই প্রাণভোমরার মধ্য থেকে একটা তীক্ষ্ণ গলার স্বর ভেসে এল।
"তোমার হৃদয় আমি দেখেছি। আর এখন সেটা আমার "
"শুনিস না এটার কথা" কর্কশ গলায় হ্যারী বলে উঠল, "মার এটাকে"
"আমি তোমার স্বপ্নগুলো দেখেছি, রোনাল্ড উইজ্লি। আর আমি তোমার ভয় গুলোও দেখেছি। তুমি যা চাও তা সম্ভব ত্যি হতে পারে। আবার তুমি যেটা ভয় পাও সেটাও হতে পারে"
"মার্!" চীৎকার করে উঠল হ্যারী। আশপাশের গাছে হ্যারীর গলার স্বর ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। তরবারীর ডগাটা কেঁপে উঠল। রন একদৃষ্টিতে টম রিড্লের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
"কেউ ভালবাসে না। কোনদিন না। মা একটা মেয়ে চেয়েছিল, হয়ে গেল ছেলে। ... কেউ ভালবাসে না। ... আর এখন... তুমি যাকে ভালবাস, সে তোমার বন্ধুকে চায়। সমস্ত জায়গায় দ্বিতীয়... তোমার কৃতিত্ব কেউ কোনদিন বুঝল না।"
"রন, এক্ষুণি মার্ এটাকে।" গলা ফাটিয়ে চীৎকার করে উঠল হ্যারী। তার হাতের মুঠোয় লকেটটার কাঁপুনিটা হ্যারী অনুভব করতে পারছিল। এর পর কী হতে পারে সেটা আন্দাজ করে হ্যারী সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। রন তরবারীটাকে আরও উঁছু করল। আর তার সঙ্গেসঙ্গেই রিড্লের চোখ রাঙা হয়ে জ্বলে উঠল।"
লকেটটার দুটি কপাটের মধ্য দিয়ে, রিড্লের সেই চোখের মধ্য দিয়ে ভাঙা ভাঙা বুদ্বুদের মত হ্যারী আর হারমাইনির মুখ ফুটে উঠল।
রন চীৎকার করে পেছনে সরে গেল। আর লকেটের ভেতর থেকে দুটি মুর্তি ফুটে উঠল। প্রথমে বুক, তারপর কোমর, তারপর পা। একসময় তারা লকেটের মধ্যে পাশাপাশি একটা গাছের দুটি ডালের মত দাঁড়িয়ে রইল আর ঘুরে ঘুরে রন আর আসল হ্যারীকে দেখতে লাগল। হ্যারী ততক্ষণে আগুন গরম হয়ে যাওয়া প্রাণভোমরার থকে হাতটা সরিয়ে নিয়েছে।
"রন!" হ্যারী চেঁচিয়ে উঠল। কিন্তু ততক্ষণে ভোল্ডেমর্টের গলায় রিড্ল-হ্যারী কথা বলতে আরম্ভ করেছে। আর রন হতভম্বের মত সেই দিকে চেয়ে আছে।
"কেন ফিরলি? তোকে ছাড়া আমরা বেশ ছিলাম। তুই থাকাকালীন যেমন ছিলাম তার চেয়ে ভাল। তোর অনুপস্থিতির ভরপুর মজা নিয়েছি আমরা। তোর গাধামো, তোর কাপুরুষতা, তোর স্ব-অনুমান নিয়ে কম হাসাহাসি করেছি আমরা?"
'স্ব-অনুমান।" রিড্ল-হারমাইনির গলায় প্রতিধ্বনির সুর। এই হারমাইনি আসলের চেয়েও সুন্দরী আর আরও ভয়ানক। দুলে দুলে আর রনের দিকে চেয়ে একটা বিচ্ছিরি হাসি হেসে সে বলে উঠল। রনের মুখ দেখলে তখন ভয় লাগবে। তবুও সে অসাড়ের মত দাঁড়িয়ে রইল। তরবারীটা তখনও তার হাত থেকে ঝুলছে। "হ্যারী পটারকে ছেড়ে কে তোর দিকে তাকাবে বল্তো? কে তোর দিকে তাকাবে? ওর তুলনায় তুই করেছিসটাকী সারাজীবনে? অনির্বাণ-বালকের তুলনায় তুই কী? "
"রন, মার এটাকে... মার এটাকে..." হ্যারী চেঁচিয়ে উঠল। কিন্তু রন একচুলও নড়ল না। তার বিস্ফারিত চোখে রিড্ল-হ্যারী আর রিড্ল-হারমাইনির ছায়া দেখা যাচ্ছিল। আগুনের শিখার মত লেলিহান তাদের চুল, চোখ রক্তবর্ণ আর গলার স্বরে উচ্চগ্রামে চীৎকার করছে শয়তানি মাখা এক দ্বৈতকন্ঠ।
"তোর মা তো স্বীকারই করল।" ব্যাঙ্গের হাসি হেসে রিড্ল-হ্যারী বলে উঠল। সেই সঙ্গে রিড্ল-হারমাইনিও তাল দিল, "যে তোর চেয়ে আমাকেই ছেলে হিসাবে তাঁর বেশী পছন্দ। পারলে পাল্টাপাল্টি করে নেন!"
"কে ও-কে চাইবেনা বল্তো? কোন মেয়ে তোকে নেবে? ও-র তুলনায় তুই কিস্যু না, কিস্যু না" রিড্ল-হারমাইনি গুনগুনিয়ে বলে উঠল। আর তারপরই সাপের মত লম্বা হয়ে রিড্ল-হ্যারীকে পাক দিয়ে সে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরল এক গভীর আলিঙ্গনে। আর তাদের ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট মিলে গেল।
মাটির ওপরে তাদের সামনে তখন রাগে-দুঃখে রনের মুখ ভরে উঠেছে। সে আবার তরবারীটা তুলে ধরল। থরথর করে তার হাত কাঁপছে।
"মার্ রন!" হ্যারী আবার চেঁচাল।
রন তার দিকে তাকাল। আর হ্যারীর কেমন যেন মনে হল রনের চোখদুটিও যেন রাঙ্গা।
"রন --?"
<ক্রমশঃ প্রকাশ্য...>
No comments:
Post a Comment